সুখের সন্ধানে যা করনীয়

সুখ নামক সোনার হরিণের পেছনে নিরন্তর ছুটে চলছি সকলে কিন্তু সেই পরম কাঙ্ক্ষিত সুখের দেখা কজনই বা পায়? সুখ আসলে কি? কি করলে সুখী হওয়া যায়? সুখের সন্ধানে যা করনীয় তা নিয়েই একটু কথা হয়ে যাক আজ।

অল্প কিছু শব্দে সুখের সংজ্ঞা দেয়া সম্ভবপর নয়। সুখী হওয়ার উপায় বলে দেয়াও মনে হয়না কার্যকরী কোন কিছু তবুও লেখাটি পড়লে হয়ত আপনার জন্য সুখের কি মানে তা নিয়ে একটু ভাবার অবকাশ পাবেন।

সুখ বলতে আমরা কি বুঝি? সকলের জন্য সুখের মানে কি সমান না ভিন্নতা রয়েছে? আপনি যে কাজে আনন্দ পান, আমিও কি তাতে সেরকম পুলকিত হব?

সুখ আসলে এক কথায় প্রকাশযোগ্য কোন বিষয় নয়। খুব সাদামাটা ভাবে বললে বলা যায় যে অবস্থা আপনাকে শান্তি দেয়, মানসিক  অসুস্থতাকে জয় করতে শেখায়, সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়, আপনার জীবনের অপ্রাপ্তিগুলোকে তুচ্ছ করে তোলে সেটাই হচ্ছে সুখ।

সুখী হওয়া মানে এই নয় যে আপনার জীবনে কোন দুঃখ নেই, হতাশা নেই, বরং জীবনের দুঃখ আর যন্ত্রণাকে পাস কাটিয়ে খুশি মনে সামনে এগিয়ে যাওয়াই হচ্ছে একজন মানুষের সুখী হওয়ার প্রমাণ।

সুখের জন্য কি অনেক অর্থের প্রয়োজন? না, অঢেল অর্থও আপনাকে পুরোপুরি সুখী করতে পারবেনা যদি আপনার মনে কোন গভীর ক্ষত থাকে। তবে, অর্থ আপনার জীবনে অপরিহার্য এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই কিন্তু শুধু অর্থ থাকলেই সুখের অস্তিত্ব টের পাওয়া যায় এটা সত্য নয়।

নেট ঘাঁটলে অনেক অনেক লেখা পাবেন সুখী হওয়ার উপায় নিয়ে কিন্তু সেই সব উপায় যে আপনাকে সুখী হতে সাহায্য করবেই তা নিশ্চিত করে বলা যাবেনা। আমার এই লেখাটি হয়ত অনেকের মনে কিছুটা দাগ কাটবে আবার অনেকের কাছে নিতান্তই সাধারণ মনে হতে পারে।

যেই অভ্যাসগুলো রপ্ত করলে জীবনে সুখের পরশ অনুভব করতে পারেন সেগুলো এই লেখায় তুলে ধরতে চাই।আমি আমার অনুভূতিকে শব্দে রূপান্তরের প্রয়াস করছি এই প্রত্যাশায় যে আমার লেখনী আপনার চোখ ও মননের জন্য সুখকর হবে।

Contents

স্রস্টার প্রতি বিশ্বাস রাখুন

জীবনে ঝড় আসবে, মুহূর্তেই হয়ত আপনার সব স্বপ্ন আছড়ে পরবে কিন্তু সেই চরম দুঃসময়েও নিজ স্রষ্টাকে ভুলে যাবেন না। অবিচল আস্থা আর অটুট বিশ্বাস রাখুন সৃষ্টিকর্তার উপর, দেখবেন জীবনে বিপদ আসলেও হতাশায় নিমজ্জিত হচ্ছেন না।

যখনই অস্থির বোধ করবেন তখনই মনে মনে স্রষ্টার সাথে কথা বলুন, ভালো লাগবে। আপনি যদি একজন বিশ্বাসী মুসলিম হয়ে থাকেন তাহলে কোন সমস্যায় পরলে কোরআন ও হাদিসের আলোকে সমাধান খুঁজে দেখুন।

অপ্রাপ্তির পাতা ছিঁড়ে ফেলুন

কি পেলাম না এই হিসাব বন্ধ হোক এই মুহূর্তেই । আমি জানি যতটা সহজে বলছি ততটা সহজ নয় কিন্তু চেষ্টা করতে তো ক্ষতি নেই। খুব ইচ্ছা ছিল অমুক জিনিসটা কিনবেন অথবা অনেক শখ করেছিলেন এবার সমুদ্র দেখে আসবেন কিন্তু সেই আশা অপূর্ণ রয়ে গেল। এরকম পরিস্থিতি আমাদের সকলের জীবনে আসে, বেশিরভাগ-সময় আমরা মন খারাপ করে বসে থাকি আর যা পেলাম না তাই নিয়ে ভাবি আর কষ্ট পাই।

অথচ জীবনে কিন্তু অনেক প্রাপ্তি আছে যা আমরা হিসেবে নেই না কিন্তু নেয়া উচিত। এই যে আপনি বেঁচে আছেন, একটু আগে হয়ত প্রিয় মানুষটির হাতের মজার রান্না খেলেন কিংবা আপনার কোন বড় অসুখ নেই, এরকম অসংখ্য নেয়ামত কি যথেষ্ট নয় সুখী হতে?

ক্ষমা করতে হবে নিজ স্বার্থেই 

আমাদের সবার জীবনেই কিছু ভিলেন থাকে যে বা যারা আমাদের আহত করে। অধিকাংশ মানুষই তার সাথে ঘটে যাওয়া অন্যায় কে ভুলে যেতে পারেনা বা সেই আঘাতকারীকে মাফ করে না।

এই ক্ষমা করতে না পারার কারণে আমরা অনেক বেশি কষ্ট পাই। যতবার সেই অপ্রিয় ঘটনা মনে করি ততবার নতুন করে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। যদি সহজে মাফ করে দিতাম তাহলে সেই বছর পুরনো ঘটনা আমাদের মন খারাপের উৎস হতনা।

আসুন, আমরা অপ্রিয় অতীত ভুলে যাই ও আমাদের কে যারা কষ্ট দিয়েছে তাদের ক্ষমা করে দেই। তবে, ক্ষমা করলেও কাউকে সেই সুযোগ দেয়া যাবেনা যে সে পুনরায় আপনাকে আঘাত করে।

প্রত্যাশার পারদ কমিয়ে দিন

মানুষ মাত্রই অন্যর কাছে প্রত্যাশা রাখে। আপনি হয়ত কারও জন্য কিছু করলেন এবং সে আপনাকে সামান্য ধন্যবাদ ও দিলনা। এরকম ক্ষেত্রে আমরা দুঃখ পাই ও হতাশ হই। হতাশা থেকে স্ট্রেস জন্ম নেয় যা আমাদের মানসিক ভাবে অসুস্থ করে দেয়।

সুখী হতে চাইলে প্রত্যাশা করার অভ্যাসটা বদলে ফেলতে হবে। কিছু আশা করে না পেলে খারাপ লাগে। তার চেয়ে আশা না করাই ভাল। আশা না করে যা পাবেন তা আপনাকে বরং সুখ এনে দেবে।

সুখের  সন্ধানে অবহেলাকে নয় ভালবাসাকে গুরুত্ব দিতে হবে

সুখী মানুষরা তাদের জীবনে ভালবাসাকে গুরুত্ব দেয়। কে আপনাকে মনে রাখল না, কে আপনার সাফল্যে খুশি হয়না এটা নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে তাদের কে সময় দিন যারা আপনাকে হৃদয়ে ধারণ করে। আপনার পরিবারের সাথে সময় কাটান, বন্ধুদের সাথে প্রাণ খুলে হাসুন।

এতো বিশাল পৃথিবীতে সবাই আপনাকে পছন্দ করবে এটা আশা করা অযৌক্তিক। যে অল্প কজন আপনার কাছের মানুষ তাদের কে নিয়েই ব্যস্ত থাকুন না, দেখবেন সুখী হবেন। সুখের সন্ধানে বার বার প্রিয়জনদের কাছে যাওয়া যায় যারা আপনাকে ভালবাসে।

সুখী হতে চাইলে চেষ্টা টা আপনাকেই করতে হবে। সুখের সন্ধানে অন্যের দ্বারস্থ না হয়ে নিজের উপর ভরসা করতে শিখুন। নিজেকে গভীরভাবে ভালবাসতে শুরু করে দিন। অন্যের ক্ষতি না করে কিভাবে নিজের ভাল থাকা নিশ্চিত করা যায় তা নিয়ে ভাবতে পারেন।

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *